মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াবেন কিভাবে | How to increase the ability to remember?

 মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াবেন কিভাবে তার আগে জেনে নিন

মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াবেন কিভাবে? Easy way to remember reading

মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াবেন কিভাবে? তার আগে জেনে নিন আমরা ভুলে যাই কেন। ভুলে যাওয়ার কারণ এর মধ্যে সবচেয়ে প্রথম হলো আমাদের "নেতিবাচক প্রোগ্রাম" আমরা মনে করি আমরা মনে রাখতে পারবোনা। দ্বিতীয়তঃ আমরা মন দিয়ে জিনিসটি শিখিনা এবং বারবার ঝালাই করি।


পরীক্ষায় দেখা গেছে তথ্যগুলো পরবর্তীতে ব্যবহার না করলে, যেকোনো পড়ার একদিনের মাথায় এর শতকরা ৭৫ ভাগই ভুলে যায় মানুষ। মনে রাখার তিন নম্বর কারণ হলো 'বিক্ষিপ্ত এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে শেখা' । তাছাড়া টেনশন দুশ্চিন্তা মন আছ না থাকলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হয়। অথচ আপনার মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতার কথা শুনলে আপনি অবাক হবেন ।


North-western ইউনিভার্সিটি, সাইকোলজির অধ্যাপক পল রিভার ব্যাখ্যা করেছেন "মানব মস্তিষ্কে যে এক বিলিয়ন এর মত নিউরন আছে তার প্রতিটি আবার আরও হাজারটি নিউরনের সাথে সংযুক্ত। এভাবে সংযোগ রান সংখ্যা দাঁড়াল ট্রিলিয়নেরও বেশি যদি ধরে নিই, প্রতিটি নিউরনে একটি করে স্মৃতি ধারণ করে তাহলেও মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা এত যে, এক জনমে তা ফুরানোর কোন সম্ভাবনা নেই ।


আমাদের ব্যবহার্য পেনড্রাইভ বা মেমোরি স্পেস এর সাথে তুলনা করে বোঝাতে গেলে তা 2.5 মিলিয়ন বেটা বাইট। ধরুন আপনার ব্রেইন যদি একটা ভিডিও রেকর্ডার করতো তাহলে এখানে যে স্পেস আছে তা দিয়ে আগামী 300 বছর একটানা ভিডিও করে গেলেও মেমোরির কোনো ঘাটতি হবে না। মানব মস্তিষ্কের এমনই মনে রাখার ক্ষমতা । 


তাহলে এবার বলুন, পড়া মনে রাখতে না পারার জন্য দায়ী কি আপনার মস্তিষ্ক না? মস্তিষ্ককে দেয়া আপনার ভুল কমান্ড?

সারাক্ষণ বলছেন কিছু মনে থাকে না, আমি মনে রাখতে পারিনা; আর চেষ্টা করছেন না মনে রাখারও। এবার তাহলে জেনে নিন মনে রাখার ক্ষমতা কে আপনি কিভাবে বাড়াতে পারেন।


মনোযোগ |পড়া মনে রাখার ৫ বৈজ্ঞানিক উপায়

মনোযোগ প্রথমেই প্রয়োজন মনোযোগ। একটা জিনিসকে আপনি যত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন, দেখবেন বা শুনবেন ততো আপনার মনে থাকবে।


এজন্য মনোযোগ দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন: এরপর যখন আপনি আপনার নোটবুক বা ডায়েরী টা  কোথায়ও রাখবেন এটা শুধু স্বভাবতই রাখবেন না।


নোটবুক রাখা টাকে সচেতন ভাবে খেয়াল করুন। কোথায় রাখলেন? এটা কি টেবিল  নাকি সেইফে। টেবিলে রাখলে তার মসৃণতা কি উপলব্ধি করুন; টেবিলে আর কি কি আছে দেখুন


সেইফে রাখলে দেখুন বামে নাকি ডানে রাখলেন কয়টা বই বা জিনিসের পরে? ডায়েরী টা কি খাড়া করে রাখলেন? না আড়াআড়ি? অন্যকিছু সাথে কি লেগে আছে? চোখ বন্ধ করে কল্পনায় ডায়েরী টা দেখুন। হাত দিয়ে স্পর্শ করুন গন্ধ শোকার চেষ্টা করুন। 


আপনার সবগুলো ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগান। কোন তথ্য যে আপনাকে খেয়ে ধরিয়ে দেবে আপনি জানেন না।


মেমোরি হুক | পড়া মনে রাখা যায় কিভাবে?

পুরনো জানা তথের সঙ্গে মিল অমিল চিন্তা করে ভাবুন;; আপনার মনে থাকবে। যেমন; কারো ঠিকানা খিলগাঁও, তালতলা। কল্পনা করুন একটি তাল গাছে, থোকা থোকা তাল ধরে আছে। আর মানুষটি দাঁড়িয়ে আছেন তাল গাছের নিচে।


রাশিয়ান রিপোর্টার্স  সরসংকি কি অসাধারণ স্মৃতি শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অসম্ভব লম্বা তালিকা, সংখ্যা, বানান তিনি বছরের পর বছর মনে রাখতে পারতেন।


মনে রাখার জন্য তিনি ব্যবহার করতেন চিত্রকল্প সংযোগ। যেমন: বাজারের তালিকা মনে রাখার জন্য তিনি কল্পনা করতেন যে,  গোর্কির দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন এবং বাজারের আইটেমগুলো রেখেছেন রাস্তায় এক একটি জায়গায় । যেমন; তিনি ডিম রাখতেন লাইটপোস্ট নিচে,দুধ রাখতে ঝর্ণায়, মাখন রাখতেন গাছে।


মনে করার সময় তিনি কল্পনায় আবার সেই রাস্তা ধরে হেঁটে যেতেন, চারপাশে তাকাতেন এবং যে আইটেমগুলো দেখতেন; তার নাম উচ্চারণ করতে।


পর্যাপ্ত ঘুম | আমি যা পড়ছি তা বুঝতে পারছি না কেন

আমাদের মস্তিষ্কের মাঝামাঝি 'U' আকৃতির ১টি অংশ আছে; একে হিপোক্যাম্পাস বলে। হিপোক্যাম্পাস আমাদের মেমোরি কার্ড ও হার্ডডিস্ক । 


মানুষ ঘুমায়-তখন মস্তিষ্কের এই অংশটিতে নতুন নিউরন কোষ জন্মায়, যার কারণে স্মৃতি প্রক্ষর থাকে। তাই স্মৃতি ঠিক রাখতে ব্যক্তিভেদে ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমের খুবই প্রয়োজন বলে বলেছেন বিজ্ঞানীরা।


প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং নির্দিষ্ট সময় উঠোন। সন্ধার পর চা কফি খাবে না, ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে; মোবাইল, ল্যাপটপ বা যে কোন ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করুন ।


মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াবেন কিভাবে

খাদ্যাভ্যাস | কোন কিছু মনে রাখার জন্য কতবার পুনরাবৃত্তি করতে হয়

সৃতিশক্তির ওপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে খাদ্যাভ্যাস। ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাস্টফুড, রিচফুড বেশি খেলে মস্তিষ্কের স্পেশাল মেমোরি ও হিপোক্যাম্পাস অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়;

যার কাজ মনে রাখা। এসব বাদ দিয়ে তাই এমন খাবার বেছে নিন যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।


বেশি বেশি ফল ও শাকসবজি খান; সম্ভব হলে প্রতিদিন এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। সাথে ওমেগা ৩ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার; যেটা আপনি সামুদ্রিক মাছ এবং বাদামে পাবেন। 


ব্যায়াম | দিনে কতক্ষণ মুখস্ত করা যায়

রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা ৭২ জন শিক্ষার্থীর উপর পরিচালিত গবেষণায় দেখেছেন, কোন কিছু শেখার ৪ ঘণ্টা পর ব্যায়াম করলে, সেটা বেশি মনে থাকে। কারণ ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে প্রোটিন নির্গত হয়।


মস্তিষ্কের যে অংশটি স্মৃতি রক্ষায় কাজ করে, প্রোটিন সে অংশকে আরো বেশি চাঙ্গা করে তোলে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন এই প্রোটিন নিঃসৃত হতে কিছুটা সময় নেয়।


তাই পড়াশোনার পর পরই নয় বরং ৪ঘণ্টা পর ব্যায়াম করুন। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করলে সেটা বেশি মনে থাকে।


মেডিটেশন | বড় প্রশ্ন মুখস্ত করার উপায়

নিয়মিত মেডিটেশন মস্তিষ্কের নিউরন কোষ বাড়াতে সাহায্য করে; তাই অনেক কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন; তাদের স্মৃতিশক্তি ভালো ভাবে কাজ করে ।


মনে রাখার জন্য প্রথমবার পড়ার দু-একদিনের মধ্যেই পড়াকে রিভার্স করুন। লিখুন; কারণ কোন কিছু লিখে রাখলে সেটা মস্তিষ্কেও লেখা হয়ে যায় ।


যা মনে রাখতে চান সেটা উচ্চস্বরে পড়ুন। এছাড়া জটিল বা ব্যাপক বিষয়কে ছবি, চার্ট বা ডায়াগ্রামের সাজিয়ে নিতে পারেন। ছবির ছাপ স্মৃতিতে বেশি থাকে।


আরও পড়ুন: কীভাবে Low Competition Keyword খুঁজে বের করতে হয় | low competition niches for blog 2023


তৈরি করতে পারেন নানা ধরনের মনে রাখার ছন্দ। যেমন: মুঘল সাম্রাজ্যের পরম্পরা বোঝাতে, বাবার হইল আবার জ্বর সারিল ঔষধে। ছড়াটি আওড়ালে বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব প্রমল গুগোল বাচ্চাদের নাম একের পর এক বলে দেয়া যায়।


ইতিহাসে এমন অনেক মনীষী আমরা জানতে পাই, যারা প্রথম জীবনে খুবই বাজে স্মৃতিশক্তি মানুষ ছিলেন। কিন্তু বিশ্বাস চেষ্টা আর অনুশীলন দিয়ে তারা সেটা জয় করেছেন। আপনিও এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন; আপনিও পারবেন। 

Previous Post Next Post

Contact Form