শীতে ত্বকের যত্ন বিস্তারিত | Winter skin care details
শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় |
শুষ্কতার প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে এর ব্যবহার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব (সেবাম) কমে যায় এবং ত্বকের শুক্ষতা বেড়ে যায় বিশেষ করে শীত কালে। তাই শুষ্কতার সমস্যা যাদের আছে তারা সাবান একটু কমই ব্যবহার করবেন।
শীত থেকে সুরক্ষা
ত্বকে যদি সামান্য শুষ্কভাব হয় তবে যে কোন অয়েল ব্যবহারই যথেষ্ট, যেমন অলিভ অয়েল বা বেবি অয়েল। তার পরিমাণ যদি একটু বেশি হয় তবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারই উত্তম।
কসমেটিক্সের দোকানে বিভিন্ন নামে ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, তবে গ্লিসারিনই হচ্ছে সবচেয়ে ভাল ময়েশ্চারাইজার। ময়েশ্চারাইজার অবশ্য ত্বকে অর্থাৎ গোসলের পর শরীর মুছে ত্বকে ভেজাভাব থাকা অবস্থাতেই মেপে দিতে হবে। গ্লিসারিন মাখার ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত আঠাভার অনেকের পছন্দ নয়। সেক্ষেত্রে ভেজা তোয়ালে বা গামছা কিংবা যে কোন ভেজা কাপড় চিপে নিয়ে আস্তে এবং আলতো ভাবে চেপে চেপে অতিরিক্ত আঠাভাব উঠিয়ে নেয়া সম্ভব। তবে ঘষা বা ডলা দেবেন না, তাতে পুরো গ্লিসারিনই মুছে যেতে পারে।
শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
কসমেটিক্সের দোকানে বিভিন্ন ধরনের দামী ইমোলিয়েন্ট পাওয়া যায় - Oilatum emollient (এটি অবশ্য ওষুধের দোকানেও পাওয়া যায়)।
ভেসিলিন যে কোন অবস্থাতেই (শুষ্ক অথবা ভেজা ত্বক) মাখা যায়, তবে ভেজা অবস্থায় মাখলে উপকার বেশি।
ঠোঁটের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ও বেলা আহারের পরপরই আহারের সময় ঠোঁট অনেকক্ষণ যাবত ভিজতে থাকে এবং আহার শেষে সাথে সাথেই ভেসিলিন ঠোঁটে মেখে দিলে ভেজা ভাবটা থেকে যায় এবং ফাটা থেকে ঠোঁট রক্ষা পায়। তবে সাবধান, জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজানোর চেষ্টা করবেন না। এতে ঠোঁট ফাটা তো কমবেই না, উপরন্ত এলার্জি ভাব দেখা দেবে এবং এই এলার্জি ঠোঁটের আশপাশের ত্বক পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
শীতকালে পায়ের যত্ন
পায়ের গোড়ালি ফাটাকে ঝামা দিয়ে ঘষে দূর করা অনেক সময় ক্ষতিকারক হতে পারে, সোরিয়াসিস-এর প্রবণতার কারণে যদি গোড়ালি ফাটে তবে অতিরিক্ত ঘষাতে সোরিয়াসিস বেড়ে যেতে পারে। তবে গোসলের সময় পায়ের গোড়ালি সামান্য ঘষে তাতে ভেজাভাব থাকা অবস্থায় ভেসিলিন মাখলে গোড়ালি ফাটবে না। শীতে পা অতিরিক্ত ঘামে। এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু অলসতার কারণে প্রতিদিনের মোজা প্রতিদিন যদি ধৌত করা না হয়, রাতে ঘুমানোর আগে পা যদি ভালভাবে ধোয়ার অভ্যাস না থাকে তবে পায়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে। পায়ের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং অতিরিক্ত ঘাম মিলে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তাই জুতোয় গন্ধ লেগে যাওয়ার পূর্বেই মোজা বদলে নিতে হবে। পা ধুয়ে নিতে হবে। জুতোতে গন্ধ লেগে গেলে আর মোজা বদলে লাভ নেই। তখন জুতোই গন্ধের আঁধার হয়ে যাবে।
ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
যাদের অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা থাকে তাদের ক্ষেত্রে পায়ের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এবং ঘামভাব কমাতে পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট-এর কয়েকটি দানা হাল্কা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ২০ মিনিট তাতে পা ভেজাতে হবে, একাধারে ৭-১৪ দিন।
পরবর্তীতে সপ্তাহে ১ বার পা ভেজালেই হবে। তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে-পানিতে পটাশের পরিমাণ যেন বেশি না হয়। পানির রং হাল্কা বেগুনি হতে হবে, অতিরিক্ত পটাশে রং গাঢ় হবে এবং তাতে ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে ফেটে গিয়ে এলার্জির মতো সমস্যা হতে পারে।
বিশেষ করে ঘরে বাইরে পুলিনয় পরিবেশে জুতো পরলে গোড়ালিতে ময়লা লাগার সুযোগ থাকে না এবং পা বেশি অক্ষও হতে পারে না। আর খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। সব সময় খোলা স্যান্ডেল পরলেও পায়ের গোড়ালি ফাটে। পায়ে মোজাও পরা যেতে পারে। মোট কথা, শীতে ত্বককে। রক্ষার জন্য ত্বক পরিষ্কার রেখে তাতে ক্রিম মেখে দিতে হবে আর হাত পা বারবার না ভেজানোই ভাল।
মনে রাখবেন: পা ভেজালে ভাল করে ধুয়ে মুছে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিম লাগাতে হবে। এভাবেই ত্বকের আর্দ্রতা যক্ষা করে ত্বককে সজীব রাখবে চেষ্টা করতে হবে।
রুক্ষ ত্বকের জন্য স্বল্পমূল্যের সাবান
যাদের ত্বক এমনিতেই রুহু কিন্তু মুখ ধোয়ার কাজে ক্লিনজার বা দামি ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহারের সামর্থ নেই, তারা কীভাবে মুখ পরিষ্কার করবেন?
এই পরিস্থিতিতে মুখ ধোয়ার কাজে গ্লিসারিন সোপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মুখ বার বার ধোয়া ঠিক নয়। গোসলের সময় ছাড়া সাবান দিয়ে দিনে ২ বারের বেশি মুখ ধোয়া ঠিক হবে না। তবে ৪/৫ বার শুধু পানি দিয়ে ভেজানো যাবে সাবান দিয়ে ধোয়া কিংবা শুধু পানি দিয়ে মুখ ভেজানোর পর মুখ মুছে মুখমণ্ডলে গ্লিসারিন/ভেসিলিন কিংবা কোল্ডক্রীম মেখে দিতে হবে। তবে মূর্খমণ্ডলের ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা কিংবা শুষ্কতা দূর করার জন্য গ্লিসারিন খুবই ভাল কাজ করে।
তৈলাক্ত মুখে শীতের যত্ন
কারো কারো মুখমণ্ডল সাধারণভাবে বেশ তৈলাক্ত থাকে। শীতের সময় মুখমণ্ডল পরিষ্কারের জন্য তাদের কোনো বিশেষ যত্নের দরকার আছে কি ?
তৈলাক্ত, শীতের সময় ত্বক সম্পর্কিত সমস্যা তাদের কম হয়। তবে বিশেষ যত্নের দরকার না পড়লেও শীতের সাধারণ যত্নের বিষয়গুলো তাদের অনুসর করতে হবে। যেমন— সাদা রঙের টয়লেট সোপ দিয়ে মুখ ধোয়া এবং মুখ ধোয়ার পর মুখ মুছে তখনই কোল্ডক্রীম লাগিয়ে নিতে হবে।
শীতে ত্বকের সাধারণ যত্নে বিষয়ে সচেতন না হলে অর্থাৎ তৈলাক্ত ত্বক রয়েছে বলে ক্রীম ব্যবহার না করলে, মুখ পরিচ্ছন্ন না রাখলে মুখমণ্ডলে শীতের প্রকোপজনিত উপসর্গ ফুটে উঠবে, রুক্ষ খসখসে হয়ে যাবে তক ফাটতে শুরু করবে। কাজেই শীতে ত্বকের যত্ন নেয়া অবশ্যই দরকার।
শীতে যাদের হাত-পা বারবার ভেজাতে হয়
যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন তাদের ক্ষেত্রে ৫ বার মুখমণ্ডলসহ হাত-পা ধুতে হচ্ছে। শীতের সময় এভাবে কয়েকবার মুখমণ্ডল, হাত-পা ধোয়ার কারণে ত্বক কি অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে যাবে ? এই অবস্থায় কীভাবে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করা সম্ভব ?
বারবার ত্বক ভেজানোর কারণে ত্বক রুক্ষ হয়ে যাবে। তবে প্রতিবার ত্বক ভেজানোর পর সেখানে অর্থাৎ ঠোঁট মুখমণ্ডল, হাত-পা ইত্যাদিতে কোল্ডক্রীম/গ্লিসারিন/ভেসিলিন ইত্যাদির যেকোনোটি মেখে নিলে ত্বক আরো বেশি সজীব হবে। কারণ দৈনিক ৪/৫ বার ওজু করার সময় ত্বক কিছুটা পানি শুষে নিচ্ছে। এই পানিটুকু ধরে রাখতে পারলে ত্বকের সজীবতা বাড়বে।
ত্বকে শোষিত পানিটুকু ধরে রাখার জন্য ভেজা ত্বক মুছে তখনি আর্দ্রতারক্ষক প্রসাধন মাখতে হবে। তবে ত্বক বেশি সময় অর্থাৎ ১০-২০ মিনিটের বেশি সাধারণ পানিতে ভেজা থাকলে তা ত্বকের জন্য ভাল নয়। কারণ এতে ত্বকের উপরিভাগের প্রতিরোধক তৈলাক্ত স্তরটি নষ্ট হয়ে যায় ।
মুখের প্রসাধনে এলার্জি হলে
মুখমণ্ডলে প্রসাধন ব্যবহারে এলার্জি ওঠে। এক্ষেত্রে কোল্ডক্রীমের বিকল্প হিসাবে স্বল্প মূল্যে কী ধরনের প্রসাধন ব্যবহার করা যায় ?
কোডক্রীমের বিকল্প হিসেবে স্বল্পমূল্যে সবচেয়ে ভাল প্রসাধন হচ্ছে-গ্লিসারিন ও পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভেসিলিন। চর্মবিশেষজ্ঞদের মতে বিভিন্ন কোল্ডক্রীমে যাদের এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া বা উপসর্গ দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রেও গ্লিসারিন ও সুগন্ধিহীন পেট্রোলিয়াম জেলি নিরাপদ।
শীতে নাজুক ত্বকের যত্ন
যাদের ত্বক বেশি রুক্ষ অর্থাৎ সামান্য শীতেই যাদের মুখমণ্ডল শুষ্ক হয়ে পড়ে, ফেটে যেতে চায় এমন ক্ষেত্রে কী ধরনের যত্ন নেয়া উচিত এইসব ক্ষেত্রে মুখমণ্ডলে পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা গ্লিসারিন মাখলে অনেক সময় ত্বকে চিটচিটে ভাব দেখা যায়। এই অবস্থায় তোয়ালে দিয়ে চেপে মুখমণ্ডল থেকে বাড়তি গ্লিসারিনটুকু শুষে নিলে অনেকটা স্বস্তি লাগবে। তবে যেকোনো ক্রীম ব্যবহারের আগে মুখ ধুয়ে নেয়া উত্তম।
বাইরে থেকে ঘুরে আসার পর মুখমণ্ডলে বেশি ধূলোবালি আটকে আছে মনে করলে গ্লিসারিন মুখে লাগাতে হবে।
শীতে সাধারণ ত্বকের যত্ন
যাদের মুখ সাধারণভাবে তৈলাক্ত অর্থাৎ ততটা তার মুখে কোন ধরনের ক্রীম মাখবেন ?
যাদের মুখ সাধারণভাবে তৈলাক্ত তারা মুখে ভিটামিন-ই ক্রীম দেখে হস্ত পাবেন। এই ধরনের ক্রীমে মুখ তেলতেলে লাগবে না অথচ জীর এছাড়া অন্যান্য কোন্ডক্রীম কিংবা হালকা ময়েশ্চারাইজার এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তৈলাক্ত ত্বকে গ্লিসারিন বা ভেসিলিন মাখার দরকার পরে না। উল্লেখ্য, ভিটামিন-ই ক্রীম ত্বকের বার্ধক্যজনিত ভাজ দূর করতে সাহায্য করে। শীতে মুখমণ্ডলে প্রসাধন মাখার নিয়ম
ক্রীম, ময়েশ্চারাইজার, গ্লিসারিন দৈনিক কয়বার, কখন মুখমণ্ডলে মাখা উচিত ? শীতে ত্বকের প্রসাধন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার পর, ঘর থেকে বেরুনোর আগে, দুপুরে বা সকালে গোসলের পর, বিকেলে ঘুম থেকে উঠে কিংবা বাইরে থেকে ফিরে মুখ ধুয়ে রাতে শোয়ার আগে (অবশ্যই) মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে (একটু বেশি করে) লাগাতে হবে। মোটামুটিভাবে দিনে ৩/৪ বার মুখমণ্ডলে শীতের ত্বক প্রসাধন লাগালেই যথেষ্ট।
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম |
ত্বকের যত্ন অলিভ অয়েল
শীতে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল কতটুকু কার্যকরী
অলিভ অয়েল শীতের ত্বকের যত্নে আর্দ্রতারোধক হিসেবে কাজ করে। মুখমণ্ডল হাত-পা সহ সারা শরীরেই এটি মাখা যায়। বিশেষ করে গোসলের পর শরীরের ঢাকা অঞ্চলে অলিভ অয়েল লাগানো যেতে পারে।
শীতে বয়স্কদের ত্বকের যত্ন
শীতে মুখমণ্ডল, ঠোঁট, হাত-পা-এর যত্নে বয়স্কদের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত?
শীতকালে বয়স্কদের ত্বকের বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী ভাল ময়েশ্চারাইজার কিংবা গ্লিসারিন সর্বাঙ্গে ব্যবহার করা ভাল। ঠোঁটে ও মুখমণ্ডলে ভেসিলিন লাগাতে হবে।
মুখমণ্ডলে দিনের বেলা ভিটামিন-ই ক্রিম এবং রাতে গ্লিসারিন লাগানো যেতে পারে। হাতের কনুই, পায়ের গোড়ালিতে ভেসিলিন/ গ্লিসারিন মাখা ভাল। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ত্বক কম ভিজানোই ভাল।
শীতে ত্বক মলিন হয় কেন ?
শীতের সময় অনেকের চেহারা কিছুটা মলিন হয়ে যায় অর্থাৎ চেহারা কিছুটা কালো হয়ে যায়। এমনটি কেন হয় ? এক্ষেত্রে ত্বক কালো হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে রক্ষা পেতে করণীয় ?
শীতের সকালে গায়ে রোদ মেখে যারা ওম পেতে চান কিংবা যারা দুপুরে, বিকেলে শীতের রোদ লাগাতে পছন্দ করেন তাদের চেহারা শীতের ঋতুতে একটু মলিন ও কালো হয়ে যেতে পারে। কারণ শীতের রোদ অন্যান্য ঋতুর তুলনা বেশি। ক্ষতিকর । শীতের সময় আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে।
ফলে অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রাভায়োলেট-রে) কোনো বাধা না পেরিয়ে সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে চলে আসে। এজন্য শীতকালে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব বেশি থাকে।
বছরের অন্যান্য সময়ে রোদের প্রখরতা বেশি থাকলেও আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। এই জলীয় বাষ্প অতিবেগুনি রশ্মির অবাধ আগমণকে বাধা দেয় । অর্থাৎ অতিবেগুনি রশ্মি জলীয় বাষ্পের বাধা পেরিয়ে আসার সময় কিছুটা তেজস্ক্রিয়তা হারিয়ে ফেলে।
শীতের রূপচর্চা
শীতের সময় অনেকেই আরাম ক গায়ে রোদ লাগান। এ কারণে অনেকের ত্বক গাঢ় বর্ণের বা সাধারণভাবে যাকে কালো হওয়া বোঝায় সেরকম হয়ে যায়। রোদ ত্বকের জন্য সব সময়েই ক্ষতিকর। শীতকালে সেই ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি। অন্যদিকে গরমের সময় মানুষ তাপ সহ্য করতে না পেরে রোদ এড়িয়ে চলে এবং তখন ত্বক কালো হওয়ার সুযোগ কম থাকে।
কাজেই সৌন্দর্য সচেতন সবাইকে এড়িয়ে চলতে হবে শীতের মিষ্টি রোদ। কারণ শীতের মিষ্টি রোদ আসলে মিষ্টি নয়।
শীতে ত্বকের ক্ষতির জন্য দায়ী কে ?
শীতকালীন রোদে অতিবেগুনি রশ্মির মাত্রা বেশি থাকে বলে তা ত্বকের ক্ষতি করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কীভাবে ত্বকের ক্ষতি করে?
আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের কোমলতা রক্ষাকারী কোলাজেনকে ভেঙ্গে দেয়। ফলে ত্বক কুঁচকে যায় এবং সজীব ত্বক বয়সী ত্বকের রূপ ধারণ করে। এছাড়া ত্বক গাঢ় বর্ণের হয়ে যায়। আল্ট্রাভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের এই ক্ষতি শুধু শীতকালেই নয় সব ঋতুতেই হয়।
কাজেই ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ বা ভাঁজ পড়ার পেছনে শতকরা ৬০-৮০ ভাগের ক্ষেত্রে সূর্য রশ্মিকেই দায়ী করা হয়ে থাকে।
শীতে সূর্য রশ্মি থেকে ত্বকের সুরক্ষা
শীতকালে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রকোপ থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য কী কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে ?
অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলা কিংবা ত্বককে সূর্যরশ্মি থেকে আড়াল করাই হচ্ছে আসল কাজ। সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলার জন্য বাইরে বেরুলে ছাতা ব্যবহার করা উচিত, রিকশার হুড তুলে রাখা উচিত, বাসে আনালার পাশে সূর্য রশ্মির সংস্পর্শে না বসে ভিতরের সিটে বসা উচিত।
এছাড়া সূর্য রশ্মি থেকে ত্বককে আড়াল করার জন্য শরীরের উন্মুক্ত অংশে যেমন- মুখমণ্ডলে, হাতে, গ্রীবায় সানস্ক্রীন জাতীয় ক্রীম লাগাতে হবে। এই সানস্ক্রীনের কার্যকারিতা ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বজায় থাকে। তিন ঘন্টার পর আবার মাখতে হবে। আল্টাভায়োলেট রশ্মি প্রতিরোধের জন্য সানস্ক্রীনের ক্ষমতা এসপিএফ (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) ১৫ হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভিটামিন-ই ক্রমও মৃদু সানস্ক্রীন হিসেবে কাজ করে। কারণে ত্বকের রং পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং ত্বকের স্বাভাবিক রং বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ধীরে সূর্যের রশ্মি থেকে চোখের চারিদিকের ত্বকের সু শীতকালে আবহাওয়ায় অতিবেগুনি রশ্মির মাত্রা বেড়ে যায়।
সূর্যের রশ্মি থেকে চোখের চারিদিকের নাজুক ত্বককে কীভাবে রক্ষা করা যায় ?
চোখের চারিদিকের ত্বককে রক্ষার জন্য চোখে সানগ্লাস পরা ভাল। এছাড়াও সানগ্লাস, সূর্য রশ্মির কারণে চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধের চেষ্টা করে।
চোখের চারিদিকের কোমল ত্বকে তৈল নিঃসরণ গ্রন্থির সংখ্যা কম থাকে বলে এ অঞ্চলের ত্বকে সহজেই ভাঁজ পড়তে চায়। অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধে প্রান্তিক লেন্সের সানগ্লাস অধিক কার্যকরী। সবুজ, বাদামি এবং কালো রংয়ের সানগ্লাসই সবচে ভাল বলে মনে করেন অনেক গবেষক।
শীতের সময় সমুদ্র কিংবা পাহাড়ে বোড়নোর ধুম লাগে, এই দুই জায়গাতেই অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিত বেশি থাকে। কাজেই উভয় স্থানেই সানগ্লাস পরা ভাল।
শীতে গৃহিণীর হাতের ত্বকের যত্ন
একজন গৃহিণী রান্নার কাজ করতে যেয়ে তাকে বারবার হাত পানিতে ভেজাতে হয়। বারবার পানিতে হাত ভেজানোর কারণে হাতের চামড়া ভেজা অবস্থায় ফুলে ওঠে। শুকালে চরম খসখসে ভাব দেখা যায় এই অবস্থায় করণীয় কী ?
শীতের সময় কেন অন্যান্য ঋতুতেও বারবার হাত পানিতে ভেজালে ত্বক ফুলে ওঠে এবং শুকালে খসখসে হয়। তবে শীতের সময় এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় হাত পানিতে কম ভেজাতে পারলে ভাল নতুবা প্রতিবার হাত ভেজানোর পর হাতটি তোয়ালে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মুছে নিতে হবে এবং গ্লিসারিন মেখে দিতে হবে। আর অন্যান্য সময়ের জন্য প্রযোজ্য ত্বকের যত্নও বহাল থাকবে।
অনুগতভাবে খসখসে ত্বক ও শীতের যত্ন
একটি ছেলের বয়স ১২ বছর তার হাত, পা, মুখ এবং সারা শরীরের ত্বকই খুব খসখসে। অনুগতভাবেই ওর ত্বক এরকম। শীতের সময় ওর ত্বক প্রচণ্ড খসখসে। হয়ে পড়ে, মুখের ত্বক কেটে যায়। এ অবস্থায় করণীয় কী?
উল্লেখ্য, মনেত নামি দামি ত্বক প্রসাধনেও কোন উপকার হয় না। এই অবস্থায় ত্বকের জন্য নামি দামি নয় দু'টি সাধারণ ত্বক প্রসাধন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
প্রসাধন দুটি হচ্ছে অতি পরিচিত গ্লিসারিন ও লেন পরে হাতে শরীরের গ্লিসারিন মাখতে হবে এবং ঠোঁটে, মুখমণ্ডলে, কনুই, পায়ের গোড়ালিতে, আঙ্গুলের ফাঁকে মাখতে হবে ভেসিলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি।
মোটামুটিভাবে সব সময়েই এগুলো মাপা অবস্থায় থাকতে হবে। খেলাধুলা জুতো পরে করবে আর খালি পায়ে হাঁটবে না, স্যান্ডেল/ জুতো ব্যবহার করবে। শরীরে শীতের প্রসাধ
শীতের সময় মুখমণ্ডল ছাড়াও সারা শরীর কেমন টানতে থাকে, শরীরের ত্বক খসখসে হয়। শরীরে মাখার মত কী কী ত্বক প্রসাধন আছে ?
শরীরে মাখার উপযোগী ত্বক প্রসাধনের মধ্যে বিভিন্ন রকমের বডিলোশন, বডি ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। এগুলো সারা শরীরের ত্বকে ব্যবহার করা যায়, এতে ত্বকের রুক্ষতা দূর হবে। শীতে শরীরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের যত্ন শীতের সময় হাতের তালু, কনুই, পায়ের গোড়ালি আঙ্গুলের ফাঁক বেশি রুক্ষ হয়, এক্ষেত্রেও বডিলোশন কাজ করবে ?
কোনটি কার ক্ষেত্রে কাজ করবে তা নির্ভর করে ত্বকের ধরনের উপর। ত্বক তৈলাক্ত হলে শীতের সময় সাধারণ বডিলোশন ব্যবহারই যথেষ্ট। সাধারণ ও রুক্ষ ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং বডিলোশন ব্যবহার করলেই হয়। আর বেশি রুক্ষ হলে হাতের তালু, কনুই, আঙ্গুলের ফাঁকে ভেসিলিন / পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহারের দরকার পড়ে। শীতে হাতের তালু ও পায়ের গোড়ালির চামড়া ওঠা।
শীতের সময় অনেকেরই হাতের তালু কিংবা পায়ের গোড়ালি থেকে মরা চামড়া ওঠে। এক্ষেত্রে করণীয় কী ?
ভেজাতে হলেও দ্রুত মুছে নিয়ে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে হবে। আর পায়ের ক্ষেত্রে পায়ের গোড়ালি খসখসে ফ্লোরে ঘরে অথবা ঝামা দিয়ে ঘষে মরা, চামড়া সরিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
তারপর সেখানে ভেসিলিন মেখে রাখতে হবে সব সময়ের জন্য। আর এক্ষেত্রে খালি পায়ে হাঁটা বারণ। পা বারবার ভেজানো বারণ । কোন কারণে ভেজাতে হলে দ্রুত মুছে নিয়ে পেট্রোলিয়াম জেলি। মেখে নিতে হবে।
শীতে শরীরের ঢাকা অংশের ত্বকের যত্ন
শরীরের যেসব অঞ্চল কাপড় চোপড়ে ঢাকা থাকে সেইসব অঞ্চলে সাধারণ ত্বক প্রসাধন লাগানো হয় না । কিন্তু একটু লক্ষ করলেই দেখা যায় শীত সেইসব ঢাকা অংশের ত্বককেও ক্ষমা করেনি। এক্ষেত্রে করণীয় কী?
শরীরে ঢাকা অঞ্চলেও উন্মুক্ত অঞ্চলের জন্য নির্বাচি প্রসাধন ব্যবহার করতে হবে। বডি লোশন/ময়েশ্চারাইজ বডিলোশন জাতীয় প্রসাধন শরীরে ঢাকা অঞ্চলে লাগাে যেতে পারে।
বিশেষ করে গোসলের পর পুরো শরীর। টাওয়েল দিয়ে চেপে মুছে নিয়ে বাথরুমেই নির্বিঘ্নে এই কাজটি সম্পন্ন করা যায়।
শীতে স্বল্পমূল্যে দেহলতার ত্বকের যত্ন
বডিলোশন, ময়েশ্চারাইজিং লোশনসহ দেহের জন্য প্রযোজ্য অনেক ত্বক প্রসাধনই সাধারণের সংগ্রহের সামর্থ্যের মধ্যে নেই। এক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যে সুলভ প্রসাধন হিসেবে কোনো কিছু আছে কি?
শরীরে মাথার জন্য সুলভ প্রসাধনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্লিসারিন। গ্লিসারিনের সঙ্গে পরিমাণমত পানি মিশিয়ে এটি সর্বাঙ্গে মেখে দিলে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা হবে। তবে শরীরে গ্লিসারিন মাখার পর অনেক সময় চিটচিটে ভাব থাকে। সেক্ষেত্রে টাওয়েল দিয়ে চেপে চেপে ত্বকের উপর জেগে থাকা বাড়তি গ্লিসারিনটুকু শুষে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে লাভ হচ্ছে অল্প খরচে লোশনের পরিমাণ বাড়লো, লোশন সুগন্ধযুক্ত হলো ও গ্লিসারিনের চিটচিটে ভাব দুর হল ।
শরীরে শীতের প্রসাধন মাখার নিয়ম
শরীরে ব্যবহারের জন্য ত্বকের আর্দ্রতারক্ষক প্রসাধন, যেমন- ময়েশ্চারাইজার, বডিলোশন, গ্লিসারিন, ভেসিলিন/ পেট্রোলিয়াম জেলি কখন ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে ?
শীতের প্রসাধন যে কোনো সময়েই ব্যবহার করা যায়। তবে ব্যবহারের আগে যেস্থানে লাগানো হবে সেটি পরিষ্কার হওয়া বাঞ্ছনীয়। এজন্য গোসলের পর পরই শীতের প্রসাধনগুলো একে একে শরীরের যথাযথ স্থানে লাগানো উচিত। কারণ গোসলের সময় ত্বক কিছুটা পানি শুষে নেয়। শোষিত এই পানিটুকু দেহের ত্বকে আবদ্ধ রাখতে পারলে ত্বক আরো সজীব হবে।
তাই গোসলের পরপরই ভেজা ত্বক তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে চেপে চেপে মুছে নিয়ে, ত্বকের ভেজা ভাব থাকা অবস্থাতেই শীতের প্রসাধন মেখে ফেলতে হবে। এইসব প্রসাধন ত্বকের ভিতরকার পানি বেরিয়ে আসতে দেয় না। ফলে ত্বক সজীব থাকবে। আর গোসলের পর ত্বক শুকিয়ে গেলে তখন প্রসাধন মাখলে ততটা লাভ হয় না।
ত্বকের মধ্যস্থিত সঞ্চিত পানি ততক্ষণে শুষ্ক বাতাস শুষে নিয়ে যায়। খ ক্রিম/ লোশন মাখলে ত্বক তৈলাক্ত ও কোমল হয় কিন্তু বাড়তি সজীবতা পায় না। কাজেই গোসলের পর ত্বকের প্রসাধন মাখার উপযুক্ত স্থান হচ্ছে বাথরুমে এটি নির্বিঘ্নে সারা যায়।
উষ্ণ গোসল কি ক্ষতিকর ?
শীতের ঠাণ্ডার জনেকেই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে চান না। গোসলের জন্য উষ্ণ পানি ব্যবহার করেন অনেকে। উষ্ণ পানিতে গোসলে ত্বক ঢিলে হয়ে যায়- কথাটি কতটুকু সত্য ?
আসলে এটি ভুল ধারণা। কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ক্ষতি নেই। তবে গোসলের সময় দীর্ঘ না হওয়াই ভাল। শরীর ১০-২০ মিনিটের বেশি ভেজা না রাখাকে অনেক চর্মবিশেষজ্ঞ ত্বকের জন্য ভাল বলে মনে করেন।
উষ্ণ পানিতে বেশিক্ষণ গোসল না করাই ভাল।
শীতে রুক্ষ ত্বকের জন্য সাবান
কারো কারো ত্বক এতটা রুক্ষ যে ত্বক সহজে কোমল হতেই চায় না অন্তত শীতের সময়। এইসব ক্ষেত্রে কী ধরনের সাবান ব্যবহার করা উচিত ?
এই অবস্থায় ময়েশ্চারাইজিং নিউট্রাল সোপ ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল । এছাড়া ময়েশ্চারাইজিং বাথজেলও ব্যবহার করা যায়। নিউট্রাল সোপ দামি তাই কিছুটা কম দামি সাবানের মধ্যে সাদা রঙের টয়লেট সোপ বেছে নেয়া যেতে পারে। অথবা গ্লিসারিন সোপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাবান খুব বেশি সময় ধরে শরীরে মেখে রাখা ঠিক নয়। আস্তে আস্তে ঘষে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তা ধুয়ে ফেলা ভালো।
Fasmc bath salt ব্যবহার করার নিয়ম |
সল্টবাথ কি?
রুক্ষ ত্বকের জন্য 'সল্টবাথ' কি উপকারী ? যদি উপকারী হয় তবে “সল্টবাথ'-এর নিয়মটাই বা কী ?
শীতের প্রভাবে যাদের ত্বক বেশি রুক্ষ ও খসখসে হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে 'সল্টবাথ' কিছুটা বাড়তি কোমলতা দেবে। 'সন্টরাথ' মানে স্যালাইন ওয়াটার বাথ। প্রতি দুই গ্লাস অর্থাৎ আধাসের পানিতে তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবন মেশানো পানিকে সল্ট ওয়াটার বলা যেতে পারে। একই অনুপাতে এক বালতি পানিতে পরিমাণ মত লবন মেশালেই তা সল্টবাথের উপযোগী হবে।
সল্টবাথের এই পানিতে পা ও শরীর ভিজিয়ে রাখলে পায়ের গোড়ালি ও গোটা শরীরের ত্বক কোমল হবে। এ পানি কমপক্ষে ১০ মিনিট ত্বক ভিজিয়ে রাখতে হবে। সল্টবাথ করার জন্য বাথটাব দরকার। । সল্টবাথের পর সাধারণ পানি দিয়ে শরীর ধুতে হবে এবং মুছে তাতে বডিলোশন বা ময়েশ্চারাইজার মেখে দিতে হবে।
পায়ের গোড়ালি ফাটা প্রতিরোধ
পায়ের গোড়ালি ফাটা প্রতিরোধে করণীয় কী?
শীত অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ফাটে। যারা খালি পায়ে হাঁটেন তাদের সর সময়ই গোড়ালি ফাটতে পারে বা রক্ষা থাকতে পারে। তবে শীতে পায়ের গোড়ালি অটার প্রবণতা খুব বেড়ে যায়। এটি প্রতিরোধে কয়েকটি ব্যবস্থা নিতে হবে।
পায়ে হাঁটা যাবে না, পায়ে যেন ধুলো না লাগে, গোসলের সময় খড়খড়ে ফ্লোরে গোড়ালি ঘষে কিংবা ঝামা অথবা গোড়ালি ঘষার বিশেষ উপকরণ দিয়ে ঘষে গোড়ালির মরা চামড়া দূর করতে হবে, গোসলের পর মুছে সেখানে ভেসিলিন গ্লিসারিন লাগাতে হবে, দরকার পড়লে সল্টবাথের স্যালাইন ওয়াটারে পা ১০ মিনিট ভিজিয়ে ঘষে মুছে সেখানে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে হবে।
এছাড়া দিনের অন্যান্য সময়েও গোড়ালিতে প্রসাধন লাগিয়ে রাখতে হবে।
এ শীতে যাদের পায়ের গোড়ালি ইতোমধ্যে ফেটে গেছে তাদের ক্ষেত্রে করণীয় কী
পায়ের গোড়ালি ফেটে গেলে ৫%-১০% স্যালিসাইলিক এসিড জাতীয় মলম গোড়ালিতে ঘষে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে সেখানে লাগানো যেতে পারে। নিয়মিত এটি ব্যবহারে গোড়ালির ফাটা কমে যাবে। সেরে যাওয়ার পর গোড়ালি ফাটা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে।
তবে পায়ের গোড়ালি বেশি ফাটলে চর্মবিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে হবে। পরে গোড়ালি ফাটা অবস্থায় কোনক্রমেই খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। এতে গোড়ালির ফাটা ফাঁকে ধুলো
ময়লা ঢুকে অবস্থার অবনতি ঘটাবে। শীতে ত্বকের যত্নে পানি পান
অনেকেই বলেন, শীতের সময় বেশি পানি পান করা ত্বকের জন্য ভাল, আসলেই কি তাই ?
শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। তাই শরীরের ত্বক কিছুটা শুরু হয়ে পড়ে। তাই শুষ্কতা পূরণের জন্য বাড়তি পানি পান করা শরীরে জন্য উপকারী। শীতে শরীরে ঘাম কম হয় বলে প্রস্রাব বেশি হয়। বেশি প্রস্রাব হওয়াটা তখন। স্বাভাবিক। প্রতিদন একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করা।
শীতে ত্বকের পুষ্টি
পুষ্টিসম্পন্ন ত্বক মানেই সুন্দর ত্বক। ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শীতের চেয়ে ভাল, সুযোগ আর নেই। কারণ শীতকালে প্রচুর সবুজ ও হলুদ শাক সবজি ও শাক পাতা পাওয়া যায় যা অন্যকোনো ঋতুতে পাওয়া যায় না। এই সবজিতে রয়েছে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন (ই,বি,সি) এন্টি অক্সিডেন্ট ও জিংক। যা ত্বকের পুষ্টি যোগায় ও সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটায়।
শাকসবজি-র এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান সূর্যরশ্মির বিরূপ প্রভাবের কারণে ত্বকে সৃষ্ট ক্ষতিকর ও রেডিক্যালসকে দূর করে। এই ফ্রি রেডিক্যালস ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার পেছনে শতকরা ৬০-৮০ ভাগ দায়ী । যার ফলশ্রুতিতে ত্বক ঢিলে হয়ে যায় ও ভাঁজ পড়ে। খাবারের পাশাপাশি ত্বকে বয়সের ভাঁজ রোধক ভিটামিন-ই ক্রীম বা লোশন মাধ্য যেতে পারে।
শীতের মেকআপ
শীতে ত্বক যেহেতু শুষ্ক হয়ে যায় তাই তখন খেয়াল রাখতে হবে মেকআপ এর ফাউন্ডেশন যেন শুষ্ক ত্বকের উপযোগী হয়। আজকাল ত্বকের ধরন অনুসারে-শুষ্ক, তৈলাক্ত ও সংবেদনশীলসহ বেশ কয়েক ধরনের ফাউণ্ডেশন পাওয়া যায়।
দিনের বেলার মেকআপ এর ক্ষেত্রে ফাউণ্ডেশন সান ফিল্টার থাকলে ভাল। এ সময়ে ক্রিম ফাউণ্ডেশন যা ঘন, মানসম্পন্ন ও ময়েশ্চারাইজিং সমৃদ্ধ অর্থাৎ ময়েশ্চার রিচ ফাউণ্ডেশনই তখন ভাল হবে। তার মেকআপ তোলার সময় সাবান ব্যবহার না করে ক্লিনজার ব্যবহার করা উত্তম।
শীতে রুক্ষ চুল
শীতের আগমনের সঙ্গে অনেকের ক্ষেত্রেই খুশকির আক্রমণ বেড়ে যায়। খুশকির এই আক্রমণ প্রতিহত করা যায় কীভাবে ?
শীতে মাথার ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণে খুশকি বেড়ে যেতে পারে। একটি বলে রাখা ভাল- খুশকি কখনো সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায় না তবে সাময়িকভাবে দমন করা যায়। শীতের সময় শুষ্ক পরিবেশের ধুলো মাথায় সহজেই দ্রুত
জমে যায়। মাথার এই ময়লা খুশকির অন্যতম কারণ। তাই মাথা পরিষ্কার রাখলেই খুশকি অনেকটা দমন হয় যা পরিষ্কারের জন্য কমপক্ষে ১ দিন অন্তর ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রতাকারক উপাদান যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া পাশাপাশি মাথায় এন্টি ড্যানড্রাফ ক্রীম (যেমন ব্রাইল ক্রিম) মাখা যেতে পারে। খুশকি দমন না হলে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শমত যথার্থ ব্যবস্থা নিতে হবে। উল্লেখ্য, ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু দিয়ে প্রতিদিন মাথা ধুলে ক্ষতি নেই।
আমদের শেষ কথা
যাদের ১টি বা ২টি বডিলোশন/ময়েশ্চারাইজিং লোশন কেনার ক্ষমতা আছে তারা ১টি বডিলোশন পরিমাণে দ্বিগুণ করে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন কিছুটা পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে তাতে পরিমাণ মত গ্লিসারিন মিশিয়ে ভাল করে ঝাঁকিয়ে নেবেন।
তারপর লোশনের একটি খালি বড় বোতলে গ্লিসারিন যুক্ত পানি ও নতুন বডিলোশন সমপরিমাণ মিশিয়ে ভাল করে ঝাঁকিয়ে নিলে যে নতুন লোশনটি তৈরি হবে সেটি ব্যবহার করুন।