মুখের ময়লা দূর করার ঘরোয়া উপায় | Face Wash Tips


মুখের ময়লা দূর করার ঘরোয়া উপায় | Face Wash Tips

মুখের ময়লা দূর করার ঘরোয়া উপায় | Face Wash Tips
মুখের ময়লা দূর করার ঘরোয়া উপায় 

পরিচ্ছন্ন মুখশ্রী রচনার সহজ শৈলী।

সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র তাই মুখশ্রী তথা ত্বকের সামগ্রিক সৌন্দর্য বিকাশে কম বেশি অর্থ ও সময় ব্যয় করতে অনেকেই আগ্রহী থাকেন। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে প্রথমেই যেসব প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার শুরু হয় সেগুলো হচ্ছে- ময়েশ্চারাইজার, পুচিসম্পন্ন গ্রাম কিংবা রঙিন আভার '' কিন্তু এই আসলেই মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখে।


আজকাল প্রসাধন সামগ্রীর ঝলমলে বিপণীগুলো যখন সাবান, লিকুইড ডিটারজেন্ট, ফেসওয়াশ, ক্লিনজিন নজিং জেল, অ্যাসট্রিনজেন্ট, ফেসমাস্ক, এক্সফোলিয়েটিং ক্রিম ইত্যা উপকরণের সমাহারে ভেসে যাচ্ছে, তখন এগুলোর মধ্য থেকে কোনটি ব্যবহার কর আর কোনটি ব্যবহার করবেন না এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়।


মুখ পরিষ্কার করার সহজ উপায়

এই লেখা আপনাকে পছন্দমত যথাযথ প্রসাধনী বেছে নিতে সাহায্য করবে। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা সঠিক ফাউন্ডেশন শেড অথবা লিপষ্টিকের জন্য শপিংয়ে বান সময় ব্যয় করে থাকেন। আর মুখ ধোয়ার বেলায় ব্যবহার করেন অনুপযোগী কোন উপকরণ; তাও আবার কোনরকম ঝটপট, অবজ্ঞাভরে, অবহেলায়। অথচ মুখ পরিষ্কারের কাজটিই প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিল। মেকআপ ব্যবহারে আগে মুখ পরিষ্কার করে তাতে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর কাজটিও কিন্তু হিসেবে মধ্যে ধর উচিত।


কিন্তু মুখ পরিষ্কারের কাজে কোন ধরনের ক্লিনজার কার জন্য উপযোগী সেটিও ভাববার বিষয়। আর সেটা নির্ভর করে ত্বকের ধরনের ওপর, বয়সের ওপর এবং এ বিষয়ে খরচের বাজেটের ওপর। কিন্তু যে কোন ক্লিনজারকে অবশ্যই দু'টি কাজ করতে হবে। এক মুখকে সর্বতোভাবে পরিষ্কার করা। দুই, মুখকে কোমলভাবে পরিষ্কার করা।


নিজেকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করে তোলার স্বার্থে প্রসাধনী ব্যবহারের আগে কোনটি উপযোগী আর কোনটি উপযোগী নয় এ বিষয়টি অবশ্যই প্রথম থেকে ভেবে নিতে হবে।


সাবান এবং ডিটারজেন্ট

এই দু'টি উপকরণ ধুলো, ময়লা, তেল, প্রসাধনী এবং ব্যাকটেরিয়াকে আপনার মুখ থেকে ছাড়িয়ে দেবে। তবে সাবান ও ডিটারজেন্ট এর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায় ?


সাবান তৈরি হয় প্রাকৃতিক ভেজিটেবল অয়েল কিংবা পশুর চর্বি থেকে। অন্যদিকে ডিটারজেন্ট তৈরি হয় কৃত্রিম উপাদান থেকে। প্রকৃতির বিষয়টিও নির্ভর করে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানের ওপর। প্র প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের ত্বকের উপযোগী করে বিভিন্ন ধরনের ডিটারজেন্ট তৈরি করে। থাকে।


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাবানের কদর দখল করে নিয়েছে- ক্রিমওয়াশ, ক্লিনজিং করার সময় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যে কথাগুলোকে সুরে গাঁথেন তা হচ্ছে সৰান জেল, ক্লিনজিং লোশন এবং এ জাতীয় অনেক উপকরণ।


আপনার ত্বককে রুক্ষ করে, সাবানের একটি শুষ্ক প্রভাব রয়েছে। কিন্তু কথাটি কি সত্যি ?

আসল কথা হচ্ছে-সাবান ত্বকের প্রতিরক্ষাকারী ‘সেবাম' (তৈলাক্ত) স্তরকে সরিয়ে দেয়, কিন্তু সেটা সাময়িকভাবে। প্রথম এক ঘন্টার মধ্যেই প্রায় শতকরা পঞ্চাশ ভাগ সেবাম আবার, ফিরে আসে। সাবান ও পানি ব্যবহারের চার ঘন্টা পর 'সেবাম'- আবার আসল


অবস্থানে ফিরে আসে। কাজেই আপনি যদি বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুতে থাকেন তবে সেখানে ত্বকের রুক্ষ অনুভূতি দেখা দেবেই।


এমনটি হওয়ার কারণ হচ্ছে-সাবান যখন ত্বকের উপরিস্থ প্রতিরক্ষামূলক স্তরকে সরিয়ে দেয় তখন পানি খুব সহজেই ত্বকভেদ করে ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। যখন এই পানিটুকু আবহাওয়া শুষে নেয় তখন ত্বকের উপরিস্থ স্তরটি চুপসে যায় এবং স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় এবং ফলশ্রুতিতে ত্বক শুষ্ক ও খস খসে অনুভূত হয়।


ছেলেদের জন্য কোন সাবান সবচেয়ে ভালো

যদিও বলা হচ্ছে প্রতিরক্ষাকারী তৈলাক্ত স্তরটি পুনরায় ফিরে আসে কিন্তু বারবার সাবান ব্যবহারে সেই প্রক্রিয়াও বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হয়ে থাকে। কাজেই সাবান ব্যবহারের পরপরই যদি সেখানে ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করা যায় তবে তা আবহাওয়ার পানি শোষণ প্রক্রিয়ায় বোধা দেয় এবং ত্বক শুষ্ক হয় না।


সুতরাং আপনার ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয়ে থাকলে রুক্ষ ধরনের সুগন্ধী সাবান এড়িয়ে চলতে হবে। যদি কখনো সুগন্ধীহীন সাবান ত্বকের রুক্ষতার জন্য দায়ী হয় সেক্ষেত্রে ক্লিনজিং ক্রিম ব্যবহারে উপকার হবে।


সাবান থেকে কি অ্যালার্জি হয় ?

হ্যাঁ, হতে পারে। যদিও এ সমস্যাটির উদ্রেক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে সাবানের সঙ্গে যুক্ত বাড়তি উপাদান যেমন সুগন্ধি থেকে। তাই সুগন্ধিহীন কিংবা কম সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। এতেও যদি সমস্যা হয় তখন সুগন্ধিহীন ক্লিনজিং ক্রীম ব্যবহার করে দেখতে পারেন ।


মেডিকেটেড সাবান

এ ধরনের সাবানে এন্টিব্যাকটেরিয়াল বা প্রতিব্যাকটেরিয়া সম্পন্ন ক্ষমতা থাকে। কিন্তু এগুলো বারবার ব্যবহারে ত্বকের রুক্ষতা দেখা দেয়। কাজেই এ ধরনের সাবানকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহারযোগ্য সাবান বলে মনে করার কোন কারণ নেই। এ ধরনের সাবান কখনোই ব্রণ কিংবা ত্বকের কোন অসুস্থতায় নির্দেশিত নয়।


কিন্তু এই ধরনের সাবান ত্বকের কোন ক্ষত থেকে পরবর্তী ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।


তবে সমস্যাহীন ত্বকের ক্ষেত্রে সাধারণ সাবানই ত্বকের উপরিস্থ ব্যাকটেরিয়াকে দূর করতে সক্ষম।


গোসলে 'বার' জাতীয় প্রসাধনী সাবান ত্বকের যত্নে ইদানীং ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো দেখতে সাবানের মতো এবং একইভাবে ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সাবানের মতো 'বার' এ কোন প্রাকৃতিক তেল বা চর্বিজাতীয় উপাদান থাকে না। এইসব বার' এ থাকে । ডিটারজেন্ট যা অজৈব খনিজ উপাদান যেমন— সোপস্টোন অথবা ‘চায়না কে। কিন্তু এগুলো অনেকদিন ব্যবহার করা ঠিক নয়।


মুখ ধোয়ার সঠিক উপায়
মুখ ধোয়ার সঠিক উপায়

মুখ ধোয়ার সঠিক উপায়

সাবান কখনোই খুব জোরে ঘষা উচিত নয়। মুখে জোরে সাবান ঘষাতে কোনই লাভ নেই। বরং এতে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়।


সাবান মাখার পর মুখ ধুয়ে মুখে পানির ঝাপটা দেয়া ভাল। এতে সাবান ও ময়লা উভয়ই ধুয়ে যায়। কিন্তু সাবান মুখ থেকে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে মুখ শুষ্ক ও চটচটে লাগবে। তাই মুখ ধোয়ার সময় উপরে চুলের রেখা ও নিচে থুতনি পর্যন্ত ঠিকভাবে ধোয়া হলো কিনা লক্ষ্য করতে হবে। ক্লিনজিংক্রিম লোশন, জেল এবং মিল্ক, ফোম, তেল ইত্যাদ।


এগুলো ত্বকের সহজলভ্য প্রসাধনী। তবে সাধারণ-কোল্ডক্রিমে উপস্থিত মূল উপাদান যেমন— তেল, ওয়াক্স, পানি ইত্যাদি থেকে উল্লেখিত প্রসাধনীগুলোর কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনোটিকে হয়তো বাড়তি উপাদান থাকে আর কোনোটিতে হয়তো কোল্ডক্রীমের একটি উপাদানের পরিবর্তে অন্য উপাদান থাকে। প্রস্তুতকারীরা ত্বকের বিভিন্ন ধরন অনুসারে ক্লিনজিং লোশন তৈরি করে থাকেন। যেমন শুষ্কত্বকের জন্য' তৈরি ক্লিনজিং লোশনের চরিত্রটাই এমন থাকে যা ত্বক থেকে কম তেল অপসারিত করবে।


মেকআপ তুলতে সাবান

মুখের মেকআপ উঠাবার জন্য সাবান কিন্তু যথেষ্ট নয়। মেকআপ উঠানোর জন্য কসমেটিক ক্লিনজার রয়েছে। এছাড়া আরো কিছু উপকরণ যেগুলোকে কেউ ক্লিনজার হিসেবে কখনো ভাবেনি, সেগুলোকেও ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এগুলোর মধ্যে আছে বেবীঅয়েল, লিকুইড প্যারাফিন ও ভেজিট্যাবল অয়েল। তবে এগুলোর মধ্যে দু'একটির গন্ধই হয়তো নাকে সইবে না।

সে যাই হোক এগুলো দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা যেতে পারে।


মেকআপ তুলতে ক্লিনজার

কসমেটিক্স ক্লিনজারে মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে যাবে। ফলে মেকআপ ও ময়লা ত্বক থেকে আলগা হয়ে থাকবে। কোনরকম ঘষাঘষি ছাড়াই ক্লিনজার এই কাজটি করবে। এরপর আপনার কাজ শুরু হবে। এবার ক্লিনজারকে ত্বক থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ ক্লিনজিং ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকতে চায় এবং এক সময় তা ত্বকের মধ্যেও ঢুকতে পারে। কাজেই তুলো বা উল অথবা টিস্যুপেপার দিয়ে আলতোভাবে মুখের ক্লিনজার মুছে ফেলতে হবে।


তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে তাতে টোনার অথবা এ্যাট্রিনজেন্ট লাগানো যেতে পারে। এতে অবশিষ্ট ক্লিনজারটুকুও অপসারিত হবে। স্কিন ফ্রেশনার, টোনার, এ্যাসট্রিনজেন্ট।


টোনের এর কাজ কি?

ত্বকের একধরনের প্রসাধনী। চরিত্রগত দিক থেকে কাছাকাছি তবে কিছুটা পার্থক্যও আছে। এগুলোর একেটিতে আলকোহলের পরিমাণ একেক রকম। যেমন----- এ্যাসট্রিনজিট তৈরি করা হয় তৈলাক্ত ত্বকের জন্য, এতে থাকে উচ্চমাত্রার এ্যালকোহল (যা ত্বককে শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে)। স্কিন ফ্রেশনার শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযোগী, এত থাকে মাঝারী ধরনের মিশ্রণ।


শুধুমাত্র ক্লিনজিং প্রক্রিয়ায় এগুলো ব্যবহার করা যায়। যদি সেই ক্লিনজারটি বেশি আঠালো বা তৈলাক্ত হয়, তাহলে তা অবশিষ্ট তৈলাক্ত উপাদান ত্বক থেকে তুলে নেবে। তবে হ্যাঁ, কারো মুখ বেশি তৈলাক্ত থাকলে সেক্ষেত্রে দিনের বেলায় ফ্রেশনার হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অল্প স্বল্প তৈলাক্ত মুখে এটি ব্যবহার না করাই ভালো। তাতে ত্বকের তৈলাক্ত আবরণ চলে যাবে ও ত্বক রুক্ষ হবে।


Astringent কি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর

এ্যাসট্রিনজেন্ট ও টোনার জাতীয় প্রসাধনী দিয়ে তুলোর বল ভিজিয়ে তা মুখে আলতো করে মেখে ব্যবহার করতে হয়। খুব হালকা করে লাগাতে হয় বিশেষ করে চোখের চারদিকের পাতলা নরম ত্বকে। জোরে সোরে ত্বকে ঘষলে এগুলো ত্বকের ক্ষতি করে। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে ত্বক বিশেষজ্ঞরা কখনোই এগুলোকে ব্যবহারের পক্ষে নয়, স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তিও তাঁরা দেখাননি।


ত্বকের মৃত আবরণ দূর করতে

ত্বক থেকে সব সময়েই একটা আবরণ মরে উঠে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রবণতা আরো বাড়ে। ত্বক থেকে মরাকোষগুলোকে দূর করে নতুন কোষ বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তবে তার সবগুলোই ভালো নয়। মোটামুটিভাবে প্রতিদিন ৩০ সেকেন্ড পাফ চিকিৎসা করাই যথেষ্ট। অধিকাংশ ত্বকই এই পদ্ধতি সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া আরো অনেক কেমিক্যাল উপাদান আছে যেগুরো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করতে হয়।


ত্বকের জন্য ফেসমাস্ক কি?

মাঝে মধ্যে ফেসমাস্ক ব্যবহার মুখ পরিষ্কারও হয় যা অনেকটা ক্লিনজারে কাজ করে আবার মুখের মরা ত্বকও দূর হয়।


মাস্ক কি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর?

ফেসমাস্কের কাজ হচ্ছে ত্বকের উপরিভাগ থেকে ময়লা, তেল ও মরা ত্বক দূর করা। এছাড়া ত্বকের বন্ধ লোমকূপ খুলে দিতেও এটি সাহায্য করে।



আমদের শেষ কথা

প্রসাধনীর নাম শুনে বিষয়টি বিচার করে নিতে পারেন। প্রয়োজনে চর্ম বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন। অজান্তে নিজের মুর্ত্তীর করুণ পরিণতিকে আমন্ত্রণ করবেন না।

সব প্রসাধনীই যে ভালো তা কিন্তু নয়। আর একথাটি 'সাবান' থেকে শুরু করে 'ফেসমাস্ক' পর্যন্ত সব প্রসাধনীর বেলাতেই সত্য।


Previous Post Next Post

Contact Form