প্রযুক্তি ট্রেন্ড বিপদজনক! যা আপনার প্রাইভেসিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে! |5 Dangerious Technology
২০২২ সালে ট্রেন্ডিং কিছু প্রযুক্তি আপনাকে ব্যাপক প্রাইভেসি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। প্রযুক্তি গুলোই এমন যে আপনি সেগুলো সরাসরি ব্যবহার না করলেও প্রভাবিত হতে পারেন। প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতি হলেও সব প্রযুক্তি যে ভাল এটা বলার অবকাশ নেই। এমনকি বর্তমানে টেকনোলজি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মনে হয় না খুব তাড়াতাড়ি এটা থামবে।
১. হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস | Home Asistant Devive
হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস আমাদের ঘরের কাজকে হয়তো সহজ করেছে। মানুষের জীবনকে সহজ করলেও এই প্রযুক্তি গুলো কখনো কখনো হতে পারে আপনার প্রাইভেসির জন্য হুমকি। যাই হোক এই সমস্ত প্রযুক্তির বিবর্তন আপনি হয়তো থামাতে পারবেন না তবে সেই ক্ষতিকর প্রযুক্তি ট্রেন্ড গুলো জেনে, নিজেকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেন। ফেস রিকুইজিশন প্রযুক্তি হয়তো মানুষকে দ্রুত আইডেন্টিফাই করছে তবে এই প্রযুক্তি গুলোর রয়েছে মন্দ দিক। বড় বড় টেক কোম্পানি নিজেদের হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস বাজারে এনেছে যেমন- Google Home, HomePod.
প্রতিটি হোম এসিস্ট্যান্ট কে বিগ ডেটা, মেশিন লার্নি এপ্লিকেশন হিসেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর বিপ্লব হিসেবে ধরা হয়, তবুও ইউজারদের প্রাইভেসি ইস্যুতে এটি বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে। অনেকে বিশেষজ্ঞ বলছে হোম ডিভাইস গুলো ইউজারদের কথাবার্তা রেকর্ড করে, কোম্পানির ক্লাউডে স্থানান্তরিত করে। এজন্য লক ডাউনের দিন গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ হোম এসিস্ট্যান্ট গুলো বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল।
এটাও সত্য সব কোম্পানি গুগল, অ্যাপলের মত সিকিউর ডিভাইস দেবে না। অনুমান করা হচ্ছে ২০২২ সালে প্রায় অর্ধেক বাড়িতে একটা হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস থাকবে। কিন্তু সবার পক্ষে ১০০+ ডলার দিয়ে হোম এসিস্ট্যান্ট কেনা সম্ভব হবে না।
তাই নিম্ব মানের হোম এসিস্ট্যান্ট নিয়ে আসে, তাহলে তারা বড় ধরনের প্রাইভেসি রিস্কে পড়তে পারে। ইউজাররা যদি এই হোম এসিস্ট্যান্ট ট্রেন্ডে সাড়া দিয়ে বাজারের কম দামী এবং অন্যান্য ডিভাইসের মত হোম এসিস্ট্যান্টও সিকিউরিটি লিকের কবলে পড়তে পারে যাহা অনুপ্রবেশকারীদের সুযোগ করে দেবে।
২. অবিশ্বস্ত ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার | face recognition system
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আদর্শ পরিস্থিতিতে ৯৯.৯ শতাংশ নির্ভুল ফল পাওয়া যায়। ফেসিয়াল রিকগনিশন অ্যাপ পর্যাপ্ত আলো এবং মুখের পরিষ্কার কোণ পেলে ভাল ইমেজ ক্যাপচার করতে পারে। এক দশক আগেও ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যারের এত ব্যবহার ছিল না। বর্তমানে এটা মানুষের ধারণাকে বদলে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পাসওয়ার্ড ছাড়া ফোন আনলক করা থেকে শুরু করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের শনাক্ত করা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখনো ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যারের আদর্শ ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায় নি।তবে অপর্যাপ্ত আলোর ফলে নির্ভুলতা মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। তাছাড়া ফেস মাস্ক এবং ভারী মেকআপ, দাড়ি, চশমা এবং মেডিকেল মাস্ক থাকলেও ফলাফলে সমস্যা হতে পারে। অপরাধীরা মুখের সামান্য পরিবর্তন করেই পাড় পেয়ে যেতে পারে। একই সাথে এটা উদ্বেগের কারণও হতে পারে, নিম্ন মানের সফটওয়্যার ব্যবহারে এটি ভুল মানুষকে শনাক্ত করে ফেলতে পারে। অপরাধ মূলক কাজের অনুসদ্ধানে সাধারণ মানুষ অযথা হয়রানীর শিকার হতে পারে।
৩. অনিরাপদ ড্রাইভারলেস এবং আধা-ড্রাইভারলেস কার | driverless car
সেলস ড্রাইভিং কার মেইনস্ট্রিমে পৌছাতে এখনো অনেক দেরি তারপরেও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শহরে এটা ব্যবহৃত হচ্ছে। ড্রাইভারলেস কার গুলোতে সাইবার সিকিউরিটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। হ্যাকাররা আপনাকে ট্র্যাক করতে পারে, আড়ি পাততে পাড়ে ব্যক্তিগত তথ্যে। ড্রাইভারলেস কারের আরেকটা অসুবিধা হল, অন্যান্য পারসোনাল ডিভাইসের মত এখানে শুধু ডেটার দিক থেকে আপনি ঝুঁকিতে থাকবেন না, শারীরিক ভাবেও আঘাত প্রাপ্ত হতে পারেন। ছোট কোন ভুলে ঘটতে পারে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা।
এই ধরনের গাড়ি প্রস্ততকারক কোম্পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছে তারপরেও মনে রাখতে হবে কোন অনলাইন বা অফলাইন সিস্টেম ১০০% সিকিউর নয়। সব সময় ইন্টারনেট এর সাথে কানেক্ট থাকে এবং প্রতি নিয়ত চারপাশের সেন্সর গুলো পজিশন ডেটা ক্লাউড সার্ভারে সেন্ড করে, ক্লাউড থেকে ডেটা প্রসেস হয়ে গাড়িকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে।
৪. মেইনস্ট্রিম পর্যায়ে ডিপফেক | deepfake app download android
মডার্ন প্রযুক্তির ডিপফেকে প্রচুর ভিজ্যুয়াল ডেটা এবং প্রসেস করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন হয়। এক আশ্চর্যজনক উদ্ভাবন হচ্ছে Deepfeke। কোন ব্যক্তির ফেক ভিডিও তৈরি করারকে মূলত ডিপফেক বলে। ভিডিও গুলো এমন ভাবে করা হয় বুঝার উপায় থাকে না। এই ডিপফেকে প্রচুর ভিজ্যুয়াল ডেটা এবং প্রসেস করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২২
যেকেউ চাইলে যে কারো ডিপফেইক তৈরি করে ফেলতে পারছে। এর আগে সুনাম নষ্ট করার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তি যেমন, রাজনীতিবিদ এবং সেলেব্রিটিদের ডিপফেক তৈরি করা হত। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হল এটা বর্তমানে অনলাইনে এভেইলেবল হয়ে যাচ্ছে। এখন একটি ভিডিও তৈরি করতে হাজার হাজার ভিডিও ফুটেজ এবং ছবির এঙ্গেল লাগেনা, সামান্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল পিকচার ব্যবহার করেই এমন ভিডিও বানিয়ে ফেলা যাচ্ছে।
৫. প্রাইভেসি নিয়ে অবহেলা
প্রাইভেসি মানবাধিকার হিসেবে গণ্য নয়। বিশ্বজুড়ে এটি সর্বনিম্ন সুরক্ষিত অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। বেশিরভাগ মানুষ প্রাইভেসিকে কেয়ার করে না। জরিপে দেখা গেছে ১৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফ্রিতে কোন কিছু পেতে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দিতেও দ্বিধা-বোধ করে না। আমাদের দেশের মানুষদের মধ্যে প্রাইভেসি ইস্যুতে তেমন কোন মাথা ব্যথা দেখা যায় না। অধিকাংশ দেশেই পরিস্থিতিটা এমন। প্রাইভেসি হল বাকস্বাধীনতার মূল ভিত্তি, এটিকে একজন ব্যক্তির নিজেকে প্রকাশ করা, স্বায়ত্তশাসন, শান্তিতে বসবাস এবং তাদের মর্যাদা বজায় রাখার ক্ষমতা হিসেবে দেখা হয়।
গত কয়েক বছরে, ইউরোপে জিডিপিআর এবং ক্যালিফোর্নিয়া কনজিউমার প্রাইভেসি অ্যাক্ট, (সিসিপিএ) এর মতো রাজ্য ভিত্তিক প্রাইভেসি আইনে, প্রাইভেসি ল একাধিকবার প্রয়োগের প্রচেষ্টা করা হয়। সর্বোচ্চ যেটা করা হয়েছে, এখানে নাম মাত্র ইউজারদের পারমিশন নেয়া হয়। অনেক চেষ্টা করেও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ করা হয় নি।
মনে করে দেখুন, ওয়েবসাইটে ঢুকতে গেলেই আমরা একটা প্রাইভেসি পপআপ পাই কিন্তু বেশিরভাগ সময় না পড়েই একসেপ্ট করে ফেলি। আবার কখনো Accept করা ছাড়া অন্য কোন অপশনও থাকে না, তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে সেগুলো একসেপ্ট করতেই হয়।
অনলাইনে কোথায় অর্থ ও সময় ব্যয় করছেন সেটা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। উল্লেখিত প্রযুক্তি ট্রেন্ড গুলো এবং এর ফলাফল কখনো কখনো আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। যা হচ্ছে সেটা আপনি বন্ধ করতে নাই পারেন তবে বিষয় গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে অনন্ত নিজেকে এর থেকে দূরে রাখতে পারবেন। প্রযুক্তি বিষয়টি এমন আপনি চাইলেও এর থেকে পুরোপুরি বেরও হয়ে আসতে পারবেন না।